-সূরা - ফুরকান ৬ষ্ঠ রুকু, আয়াতঃ ৬৩ -৭৭
وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا(২৫:৬৩) وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا (২৫:৬৪) وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا (২৫:৬৫) إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا (২৫:৬৬) وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا (২৫:৬৭) وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا (২৫:৬৮) يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا (২৫:৬৯) إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا (২৫:৭০) وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا (২৫:৭১) وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا (২৫:৭২) وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا (২৫:৭৩) وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (২৫:৭৪) أُولَٰئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا (২৫:৭৫) خَالِدِينَ فِيهَا ۚ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا (২৫:৭৬) قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلَا دُعَاؤُكُمْ ۖ فَقَدْ كَذَّبْتُمْ فَسَوْفَ يَكُونُ لِزَامًا (২৫:৭৭)
৬৩· রহমান-এর (আসল) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।
৬৪· এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে;
৬৫· এবং যারা বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছথেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ;
৬৬· বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা।
৬৭· এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।
৬৮· এবং যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ্ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।
৬৯· কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্চিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।
৭০· কিন্তূ যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৭১· যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসে।
৭২· এবং যারা মিথ্য সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার (বাজে) ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।
৭৩· এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।
৭৪· এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ্বরূপ কর।
৭৫· তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দোয়া ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা করা হবে।
৭৬· তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কত উত্তম।
৭৭· বলুন, আমার পালনকর্তা পরওয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলেছ। অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।
-আয়াতঃ ৬৩ -৭৭
ব্যাখ্যাঃ
নাম করণঃ প্রথম আয়াত থেকে।
নাযিলের সময়কালঃ
রাসূল (সঃ) এর মক্কায় অবস্থান কালের মাঝামাঝি সময়।
বিষয় বস্তু ও কেন্দ্রিয় আলোচ্য বিষয়ঃ
মুমিনদের নৈতিক গুণাবলীর একটি নকশা তৈরী করে সেই মানদন্ডে যাচাই করে খাঁটি ও ভেজাল নির্ণয় করা।
৬৩· রহমান-এর (আসল) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।
রহমানের বান্দাঃ
সবাই আল্লাহর জন্মগত বান্দা। কিন্তু যারা সচেকনতা সহকারে বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে কতকগুলো বিশেষ গুণাবলী নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করে তারাই আল্লাহর প্রিয় ও পছন্দনীয় বান্দা।
নম্রভাবে চলাফেরা করাঃ
১.অহংকারের সাথে বুক ফুলিয়ে না চলা
২.চলার মাধ্যমে নিজের শক্তি প্রকাশ না করা
৩.কৃত্রিম চলার ভঙ্গি সৃষ্টি করে দূর্বল ও রোগীর মত চলা নয়
৪.রসূল (সঃ) চলার সময় এমন শক্ত ভাবে পা ফেলতেন যেন তিনি নিচের দিকে নামছেন
৫.হযরত উমার (রাঃ) এক যুবককে দূর্বল ভাবে যেতে দেখে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি অসুস্থ? সে বলে না। তিনি ছড়ি উঠিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলেন শক্ত হয়ে সবল ব্যক্তির মত চল। তোমাদের মত মানুষ গুলো ইসলাম কে কুজো বানিয়ে ফেলছে। সূরা বনীইসরাইল-৪৩
কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মানুষের চলার মধ্যে এমন কি গুরুত্ব আছে যে কারণে আল্লাহ সৎ বান্দাদের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ প্রসংগে সর্বপ্রথম এর কথা বলা হয়েছে? মানুষের চলা শুধুমাত্র তার হাঁটার একটি ভঙ্গি নয়, বরং আসলে এটি তার মন-মানস, চরিত্র ও নৈতিক কার্যাবলীর পত্যক্ষ প্রতিফলন।
মূর্খঃ অশিক্ষিত ও লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকান্ডে লিপ্ত। গালির জবাবে গালি, দোষারোপের জবাবে দোষারোপ, বেহুদাপনার জাবাবে বেহুদাপনা করে এমন প্রকৃতির লোক।
” আর যখন তারা কোন বেহুদাপনা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে চলে। বলে, আরে ভাই আমাদের কাজের ফল আমরা পাব, আর তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জহেলদের সঙ্গে কথা বলি না।” (সূরা কাসাস-৫৫)
৬৪· এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে;
এটা হচ্ছে রহমানের বান্দাদের রাতের জীবন।
”তাদের পিছ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, নিজেদের রবকে ডাকতে থাকে আশায় ও আশংকায়” (সাজদা-১৬)
”এ সকল জন্নাতবাসী ছিল এমন সব লোক যারা রাতে সামান্যই ঘুমাত এবং ভোর রাতে মাগফিরাতের দোয়া করত” (জারিয়াত-১৭-১৮)
” যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম পালনকারী, রাতের বেলা সিজদা করে ও দাঁড়িয়ে থাকে, আখেরাতের ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের প্রত্যাশা করে তার পরিণাম কি মুশরিকের মত হতে পারে?” (যুমার-৯)
৬৭· এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।
ইসলামের দৃষ্টিতে তিনটি জিনিস কে আমিতব্যয়িতা বলা হয়ঃ
ক) অবৈধ কাজে অর্থ ব্যয় করা
খ) বৈধ কাজে ব্যয় করতে যেয়ে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া
গ) সৎ কাজে ব্যয় করা কিন্তু তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয় বরং লোক দেখানোর জন্য ও সম্মান পাওয়ার জন্য।
কার্পন্য বলে বিবেচিত হয় দুইটি জিনিসঃ
ক) নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনদের প্রয়োজন পূরণের জন্য নিজের সামর্থ অনুযায়ী ব্যয় করে না
খ) ভালো ও সৎ কাজে পকেট থেকে পয়সা বের হয় না।
মধ্যম পন্থ অবলম্বনঃ রাসূল (সঃ) বলেছেন, নিজের অর্থনৈতিক বিষয়াদিতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা মানুষের ফকীহ (জ্ঞানবান) হবার অন্যতম আলামত” (আহমদ ও তাবারানী)
৬৮· এবং যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ্ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
আরববাসী সবচেয়ে বড় যে তিনটি গোনাহের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল তা হচ্ছে এই তিনটি গোনাহঃ শিরক, অন্যায় ভাবে হত্যা এবং যিনা।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, এশবার নবীকারীম (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, সবচেয়ে বড় গোনাহ কি? তিনি বলেনঃ “তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকষ্ড়্গ প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করাও অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” জিজ্ঞেস করা হল, তারপর? বল্লেনঃ “তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যাকর এই ভয়ে যে সে তোমার সাথে আহার কারবে।” জিজ্ঞেস করা হল, তারপর? বল্লেনঃ “তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর।” (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, আহমদ)
৬৯· কেয়ামতের দিন তাদের উপর্যুপরি শাস্তি দেওয়া হবে এবং তথায় লাঞ্চিত অবস্থায় চিরকাল পড়ে থাকবে।
এখানে দুই ধরনের অর্থ হতে পারেঃ
ক) শাস্তির ধারা শেষ হবে না বরং একের পর এক আসতে থাকবে
খ) যে ব্যক্তি শিরকের সাথে অন্যান্য গোনাহের বোঝা মাথায় নিয়ে যাবে সে শিরকের (বিদ্রোহের) শাস্তি আলাদা ভাবে ভোগ করবে এবং অন্যান্য প্রত্যেকটি অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে আলাদা আলাদা ভাবে। যেমন হত্যার জন্য একটি শাস্তি দেওয়া হবে না, বরং হত্যার প্রত্যেকটি কর্মের জন্য পৃথক পৃথক শাস্তি দেওয়া হবে। যে অপরাধ যতবার করবে, প্রত্যেকবারই তার পৃথক পৃথক ভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।
৭০· কিন্তূ যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাওবার নিয়মঃ
১· সর্ব প্রথম ঐকান্তিকতার সাথে নিজ ভুলের স্বীকৃতি দেওয়া। এটা সহজ কাজ নয়। মানুষ বড় একটি পাপ করেও তা “জাস্টিফাই” করতে চায়।
২· ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া।
৩· দ্বিতীয়বার ভুল না করার জন্য ওয়দা করা এবং ওয়াদাকে কার্যকরী করার বাস্তব চিন্তা করা।
৪· নামাজ, রোজা বা আর্থিক কুরবানীর মাধ্যমে ভুলের কাফ্ফারা আদায় করা।
যারা ইতিপূর্বে নানা ধরনের অপরাধ করেছে এবং এখন সংশোধনীর প্রয়াসী হয়েছে তাদের জন্য এটি একটি সুসংবাদ। এ ঘোষনাটি সেকালের বিকৃত সমাজের লাখো লাখো লোককে স্থায়ী বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি তাদেরকে আশার আলো দেখায় এবং অবস্থা সংশোধনে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যথায় যদি তাদেরকে বলা হত, তোমরা যে পাপ করেছ তার শাস্তি থেকে এখন কোন প্রকারেই নিষ্ড়্গৃতি পেতে পারো না, তাহলে এটি তাদেরকে হতাশ করে চিরকালের জন্য পাপ সাগরে ডুবিয়ে দিত এবং তাদের সংশোধনের আর কোনোই সম্্ভাবনা থাকত না।
তাওবার এ নিয়ামতটি আরবের বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট লোকদেরকে কিভাবে সঠিক পথে এনেছে নবী (সঃ) এর আমলে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা থেকে তা অনুমান করা যায়। যেমন - এক মহিলার যিনা করার ফলে ভুমিষ্ঠ সন্তান হত্যা করার পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করার ঘটনা, এক ব্যক্তির বৃদ্ধ বয়সে তাওবা করার ঘটনা। (তাফহীম)
আল্লাহ্ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেনঃ এর দুটি অর্থ হতে পারে।
ক) যখন তারা তাওবা করবে তখন ইতিপূর্বে কুফরী জীবনে আরো যে সমস্ত খারাপ কাজ করতো তার জায়গা এখন ঈমান আনুগত্যের জীবনে আল্লাহ তাদের সৎকাজ করার সুযোগ দিবেন এবং তারা সৎকাজ করতে থাকবে।
খ) তাওবার ফলে তাদের আমলনামা থেকে কেবল কুফরী ও গোনাহগারী জীবনের যেসব অপরাধ করেছিল সেগুলো কেটে দেওয়া হবে না বরং তার পরিবর্তে প্রত্যেকের আমলনামায় এ নেকী লেখা হবে যে, এ হচ্ছে সেই বান্দা যে কুফরীর পথ পরিহার করে আনুগত্যের পথ অবলম্বন করেছে। তারপর যতবারই সে নিজের পূর্ববর্তী জীবনের খারাপ কাজগুলো স্মরণকরে তাওবা করবে ততবারই তার আমলনামায় নেকী লেখা হবে, কারণ তাওবা করা একটি নেকীর কাজ।
৭২· এবং যারা মিথ্য সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার (বাজে) ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।
মিথ্যা সাক্ষ্যকে দুই ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারেঃ
ক) তারা কোন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না
খ) তারা মিথ্যা প্রত্যক্ষ করে না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার দেখে না
৭৩· এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।
৭৪· এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ্বরূপ (ইমাম) কর।
এ আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখন এমন একজনও ছিল না যার প্রিয়তম আত্নীয় কুফরী ও জাহেলিয়াতের মাধ্যে অবস্থান করছিল না। স্ত্রী মুসলমান, স্বামী কাফির; বাবা মুসলমান, ছেলে মুশরিক এই ধরনের কঠিন অবস্থা বিরাজ কারছিল। এ অবস্থায় প্রত্যেকটি মুসলমানের অন্তর থেকে যে দোয়া বের হচ্ছিল তার সর্বোত্তম প্রকাশ পেয়েছে এই আয়াতে “চোখের শীতলতা” দিয়ে।
মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ্বরূপ (ইমাম) কর - দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহভীতি ও সৎকর্মশীলতার ক্ষেত্রে পরস্পরের অগ্রবর্তী হবার চেষ্টা করে, আনুগত্যের ক্ষেত্রে সাবার চেয়ে এগিয়ে থাকার প্রচেষ্টা।
৭৫· তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দোয়া ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা করা হবে।
সবরঃ
১.সকল কাজে ধৈর্যশীল হওয়া
২.জুলুম নির্যাতনের মোকাবেলা সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তার সাথে কারা
৩.ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে দৃঢ়পদ থাকা
৪.সব ধরনের বিপদ-আপদ ও কষ্ট বরদাশত করা
৫.চেষ্টার ফল তাড়াতাড়ি পাওয়ার চেষ্টা না করা
৬.আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে অবস্থান করা
৭.বার বার ব্যর্থ হয়েও পরিশ্রম থেকে বিরত না হওয়া
৮.নফসের খারাবীর বিপক্ষে থেকে নিজেকে মুক্ত করা
৯.নিজ কর্তব্য সম্পাদন করা
রহমানের বান্দাদের ১৩ টি গুণঃ
১· বান্দা, দাস; যে তার প্রভুর মালিকানাধীন এবং তার সমস্ত ইচ্ছা ও ক্রিয়াকর্ম প্রভুর আদেশ ও মর্জির উপর নির্ভরশীল
২· জমিনে সম্রতাসহকারে চলাফেরা করা
৩· যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তাদেরকে সালাম বলা,
৪· নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া
৫· আল্লাহকে ভয় করা (তাকওয়া অবলম্বন করা)
৬· ব্যয় করার ক্ষেত্রে মাধ্যম পন্থা অবলম্বন করে
৭· শিরক না করা
৮· অন্যায়ভাবে হত্যা না করা
৯· যিনা থেকে বেচে থাকা
১০· মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না
১১· অহেতুক কাজ করে না
১২· বুঝে বুঝে কুরআন অধ্যয়ন করা
১৩· আল্লাহর কাছে দোয়া করা
0 মন্তব্যসমূহ