করোনা-পরবর্তী নতুন বিশ্ব ও আমাদের করণীয় :
পুরো বিশ্ব আজ করোনার ভয়ে আতঙ্কিত। বিশ্বের সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলো করোনার আক্রমণে পর্যুদস্ত। একে একে বাড়ছে এর উপদ্রব, কমার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জনজীবন বিপর্যস্ত, কল-কারখানা নিস্তব্ধ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা সব বন্ধ। সবাই এখন নিজ নিজ ঘরের জিন্দানখানায় আবদ্ধ। জীবনযাত্রা কবে স্বাভাবিক হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুব শীঘ্রই সে আশাও করা যাচ্ছে না। চারিদিকে কেবল হাহাকার, আতঙ্কভাব ও খাদ্যের অভাব। সব জায়গাতেই সংকট শুরু হয়ে গেছে। অভাবে তাড়নায় দরিদ্ররা এখন ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলা-মারামারি ও চুরি-ডাকাতিও শুরু হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তরা রাস্তায় নামার অপেক্ষায় আছে। ঘরে খাবার না থাকলে আর কীই বা করা আছে! ধনীদেরও হয়তো শীঘ্রই নামতে হবে। সবাই একই পথের পথিক হয়ে যাবে। টাকা থাকলেও নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাবে না। একসময়ের সুলভ পণ্যগুলোই সামনে হয়তো দুর্লভ হয়ে পড়বে। এটা কেবল জাতীয় সংকট নয়; বরং আন্তর্জাতিকভাবে পুরো বিশ্বই এ সংকটের সম্মুখীন হবে।
করোনা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের নানারকম মিথ ও ব্যাখ্যা দেখা যাচ্ছে। কেউ এটাকে চীনের তৈরি বলছে, কেউ বলছে আমেরিকার তৈরি, কেউ বলছে ইলুমিনাতির কারসাজি, কারও মতে প্রাকৃতিক মহামারি। কিন্তু এটা যে, আল্লাহর আজাব ও গজব হতে পারে, সে কথা অধিকাংশ মানুষই এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে শয়তান জিন কিংবা দাজ্জালের হাত থাকতে পারে, সে কথাও অনেকে ভুলে যাচ্ছে। বাস্তবতা কী, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। এটা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে আমাদের তেমন কোনো লাভ নেই। আমাদের দরকার হলো, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করা এবং সে অনুপাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। পৃথিবী এখন কোন দিকে ধাবমান, বিজ্ঞজনেরা অনেকেই তা অনুমান করতে পারছেন। সামনের সময়গুলো হবে অনেক কঠিন, অনেক ভয়ংকর। দিন দিন আমাদের সামনে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের দিকগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সম্ভবত বিশ্ব নতুন কোনো যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আহলে ইলম ও আহলে বাসিরাতরা কেমন যেন দিব্যি সব দেখতে পাচ্ছেন। এমনকি কিছু সচেতন মানুষও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুকে নিয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি না; আমাদের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিকব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে। এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিপর্যয়, তাই এতে পুরো বিশ্বের অনেক সিস্টেমই ভেঙে পড়বে। যদিও প্রচলিত এ সিস্টেম ভেঙে পড়লে আমি অখুশি হব না; বরং আনন্দিতই হব। বৈশ্বিক এ জুলুমানা ব্যবস্থা ভেঙে যদি আঞ্চলিকভাবে ইনসাফানা রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের মুসলিমদের সবদিকে থেকেই লাভ। বিষয়টি নিয়ে এখানে বেশি বিশ্লেষণের প্রয়োজনবোধ করছি না। বিশ্ব ও শেষ জমানার ফিতনা নিয়ে সচেতন কোনো মুসলিমের এটা না বুঝার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এখানে অনেক ভয়ের বিষয়ও আছে। সবচেয়ে কঠিন বিষয় হবে ইমান রক্ষা করার বিষয়টি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, বিশ্বে করোনা-পরবর্তী দুর্ভিক্ষ চলে আসলে মানুষ দলে দলে ইমানের তাঁবু থেকে বের হয়ে যাবে। ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণার্ত হয়ে নয়; এসব হবে চরম ক্ষুধা ও অভাবের তাড়নায়।
করোনা-পরবর্তী দুর্ভিক্ষ যে আসবেই, তা চূড়ান্ত বা নিশ্চিত নয়, তবে বিবেকবানদের অজানা নয় যে, বৈশ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এ মুহূর্তে করোনা কাদের তৈরি, সে গবেষণায় না গিয়ে আমাদের দুর্ভিক্ষকালীন প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা উচিত। এটাকে আবার তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ভাবার কোনো কারণ নেই। সাইয়িদুনা ইউসুফ আ.-এর সময়ে দুর্ভিক্ষের ঘটনা ও তাঁর অগ্রীম প্রস্ততির কথা আমাদের কারও অজানা নয়। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা বা এটাকে তাওয়াক্কুল পরিপন্থী মনে করা আমাদের অতিআবেগের ফল; যেমনটি আমাদের কিছু অতিআবেগী ভাইয়েরা আলিম-উলামার পরামর্শ না মেনে ইদানিং মসজিদগুলোতে নাকি প্রচুর পরিমাণে ভিড় জমাচ্ছেন আর বয়ান ছুড়ছেন যে, আল্লাহর ঘরে নাকি কখনো করোনা আসবে না!!! আরে ভাই, এখন এসব অদ্ভূত ও বিকৃত সব চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে বাস্তবমুখী হওয়ার চেষ্টা করুন। বিপদ যখন ধেয়ে আসবে, তখন শুধু মসজিদ না, নিজের ইমানটাও ছেড়ে দিতে পারেন। তাই সাবধান! বাড়াবাড়ি কোথাও ভালো ফল বয়ে আনে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা কয়েকটি কাজ করতে পারি। যেমন : নিজেদের অনাবাদী জমি চাষের উপযোগী করে সেখানে ফসল ও অন্যন্য বীজ রোপন করা। সম্ভব হলে আগে থেকেই শুকনো খাবার, চাল, ডাল, পিয়াজ ইত্যাদি ও বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণ করে রাখা। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সংগ্রহ ও প্রাথমিকভাবে গাছগাছড়ার চিকিৎসা শিখে রাখা। বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি, আলু-মরিচ, পেঁপে-লাউ ইত্যাদির চারা লাগানো। সামর্থ্য অনুযায়ী গরু-ছাগল-মহিষ পালনের ব্যবস্থা করা। বাড়ির পাশে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা। ওয়াসা বা মটরচালিত পানিব্যবস্থার ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে কুয়ো, টিপকল বা নলকূপ বসানো। বিদ্যুতের জন্য সৌরচালিত বিদ্যুৎব্যবস্থা এবং আপতকালিন সময়ের জন্য টর্চ লাইট, ব্যাটারি, কেরোসিন তেল, বাতি, হারিকেন ইত্যাদিও রাখা দরকার। পাশাপাশি চোর ও লুটেরাদের থেকে পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য বাড়ির চারপাশে মজবুত দেয়াল বা প্রাচীর দেওয়া উচিত। নইলে অভাবের তাড়নায় মানুষ সব জায়গায় হামলে পড়তে পারে। তখন যেখানে যা পাবে, তাই নিয়ে যাবে; চুরি করে বা জোর করে হলেও। বর্তমানের ক্যাশ টাকা না ব্যাংকে রাখা নিরাপদ আর না ঘরে রাখা। বিশ্বে সম্ভবত শীঘ্রই ডলারব্যবস্থা বাতিল হতে পারে। আর এটা হলে পুরো বিশ্বে যে কী হবে, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। ডলার ও ক্যাশ টাকার পরিবর্তে সোনা-রোপার গহনা অনেক অনেক বেটার অপশন।
এগুলো তো দুর্ভিক্ষকালীন ভালো থাকার জন্য জাগতিক কিছু হিসাব-কিতাব। কিন্তু এ সময়ে সবেচেয়ে কঠিন হবে, মানুষের ইমান রক্ষা করা। সময়টা হবে খুবই করুণ ও নাজুক। একদিকে জীবনের তাগিদ, আরেকদিকে ইমানের দাবি। খুব কম লোকই তখন নিজেদের ইমান হিফাজত করতে সক্ষম হবে। দুর্ভিক্ষে মারা গেলে তো বেশির চেয়ে বেশি দুনিয়া বরবাদ হবে। কিন্তু ইমান হারালে দুনিয়া-আখিরাত সবই বরবাদ হয়ে যাবে। তাই ইমান বাঁচানোর প্রস্তুতি হিসেবে এখন প্রচুর বই পড়ুন। শেষ জমানার ফিতনা ও ভয়াবহতা নিয়ে বর্তমানে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। একটু কষ্ট করে, আগ্রহ করে খোঁজ নিন। বইয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বা সাহায্য পেতে ইসলামি বই গ্রুপগুলোতে গিয়ে হেল্প নিতে পারেন। যেভাবেই হোক সংগ্রহ করুন, যেভাবেই হোক জানুন। প্রতি শুক্রবার সুরা কাহাফ পড়ুন। সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ দশ আয়াত মুখস্ত করে রাখুন। সব ধরনের গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হয়ে পুরোপুরি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন। দুনিয়ার বিলাসিতা পরিত্যাগ করে আখিরাতের ফিকিরে আত্মনিয়োগ করুন। আল্লাহ আমাদের বুঝা ও আমল করার তাওফিক দান করুন।
কার্টেসীঃ তারেকুজ্জাযান তারেকশ্ব ও আমাদের করণীয় :
পুরো বিশ্ব আজ করোনার ভয়ে আতঙ্কিত। বিশ্বের সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলো করোনার আক্রমণে পর্যুদস্ত। একে একে বাড়ছে এর উপদ্রব, কমার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জনজীবন বিপর্যস্ত, কল-কারখানা নিস্তব্ধ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা সব বন্ধ। সবাই এখন নিজ নিজ ঘরের জিন্দানখানায় আবদ্ধ। জীবনযাত্রা কবে স্বাভাবিক হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। খুব শীঘ্রই সে আশাও করা যাচ্ছে না। চারিদিকে কেবল হাহাকার, আতঙ্কভাব ও খাদ্যের অভাব। সব জায়গাতেই সংকট শুরু হয়ে গেছে। অভাবে তাড়নায় দরিদ্ররা এখন ঘর থেকে বের হয়ে আসছে। কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলা-মারামারি ও চুরি-ডাকাতিও শুরু হয়ে গেছে। মধ্যবিত্তরা রাস্তায় নামার অপেক্ষায় আছে। ঘরে খাবার না থাকলে আর কীই বা করা আছে! ধনীদেরও হয়তো শীঘ্রই নামতে হবে। সবাই একই পথের পথিক হয়ে যাবে। টাকা থাকলেও নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাবে না। একসময়ের সুলভ পণ্যগুলোই সামনে হয়তো দুর্লভ হয়ে পড়বে। এটা কেবল জাতীয় সংকট নয়; বরং আন্তর্জাতিকভাবে পুরো বিশ্বই এ সংকটের সম্মুখীন হবে।
করোনা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের নানারকম মিথ ও ব্যাখ্যা দেখা যাচ্ছে। কেউ এটাকে চীনের তৈরি বলছে, কেউ বলছে আমেরিকার তৈরি, কেউ বলছে ইলুমিনাতির কারসাজি, কারও মতে প্রাকৃতিক মহামারি। কিন্তু এটা যে, আল্লাহর আজাব ও গজব হতে পারে, সে কথা অধিকাংশ মানুষই এড়িয়ে যাচ্ছে। এতে শয়তান জিন কিংবা দাজ্জালের হাত থাকতে পারে, সে কথাও অনেকে ভুলে যাচ্ছে। বাস্তবতা কী, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। এটা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে আমাদের তেমন কোনো লাভ নেই। আমাদের দরকার হলো, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করা এবং সে অনুপাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। পৃথিবী এখন কোন দিকে ধাবমান, বিজ্ঞজনেরা অনেকেই তা অনুমান করতে পারছেন। সামনের সময়গুলো হবে অনেক কঠিন, অনেক ভয়ংকর। দিন দিন আমাদের সামনে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের দিকগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সম্ভবত বিশ্ব নতুন কোনো যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আহলে ইলম ও আহলে বাসিরাতরা কেমন যেন দিব্যি সব দেখতে পাচ্ছেন। এমনকি কিছু সচেতন মানুষও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা করোনা ভাইরাসে মৃত্যুকে নিয়ে বেশি ভয় পাচ্ছি না; আমাদের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিকব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে। এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিপর্যয়, তাই এতে পুরো বিশ্বের অনেক সিস্টেমই ভেঙে পড়বে। যদিও প্রচলিত এ সিস্টেম ভেঙে পড়লে আমি অখুশি হব না; বরং আনন্দিতই হব। বৈশ্বিক এ জুলুমানা ব্যবস্থা ভেঙে যদি আঞ্চলিকভাবে ইনসাফানা রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের মুসলিমদের সবদিকে থেকেই লাভ। বিষয়টি নিয়ে এখানে বেশি বিশ্লেষণের প্রয়োজনবোধ করছি না। বিশ্ব ও শেষ জমানার ফিতনা নিয়ে সচেতন কোনো মুসলিমের এটা না বুঝার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এখানে অনেক ভয়ের বিষয়ও আছে। সবচেয়ে কঠিন বিষয় হবে ইমান রক্ষা করার বিষয়টি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, বিশ্বে করোনা-পরবর্তী দুর্ভিক্ষ চলে আসলে মানুষ দলে দলে ইমানের তাঁবু থেকে বের হয়ে যাবে। ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণার্ত হয়ে নয়; এসব হবে চরম ক্ষুধা ও অভাবের তাড়নায়।
করোনা-পরবর্তী দুর্ভিক্ষ যে আসবেই, তা চূড়ান্ত বা নিশ্চিত নয়, তবে বিবেকবানদের অজানা নয় যে, বৈশ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এ মুহূর্তে করোনা কাদের তৈরি, সে গবেষণায় না গিয়ে আমাদের দুর্ভিক্ষকালীন প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করা উচিত। এটাকে আবার তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ভাবার কোনো কারণ নেই। সাইয়িদুনা ইউসুফ আ.-এর সময়ে দুর্ভিক্ষের ঘটনা ও তাঁর অগ্রীম প্রস্ততির কথা আমাদের কারও অজানা নয়। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা বা এটাকে তাওয়াক্কুল পরিপন্থী মনে করা আমাদের অতিআবেগের ফল; যেমনটি আমাদের কিছু অতিআবেগী ভাইয়েরা আলিম-উলামার পরামর্শ না মেনে ইদানিং মসজিদগুলোতে নাকি প্রচুর পরিমাণে ভিড় জমাচ্ছেন আর বয়ান ছুড়ছেন যে, আল্লাহর ঘরে নাকি কখনো করোনা আসবে না!!! আরে ভাই, এখন এসব অদ্ভূত ও বিকৃত সব চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে বাস্তবমুখী হওয়ার চেষ্টা করুন। বিপদ যখন ধেয়ে আসবে, তখন শুধু মসজিদ না, নিজের ইমানটাও ছেড়ে দিতে পারেন। তাই সাবধান! বাড়াবাড়ি কোথাও ভালো ফল বয়ে আনে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা কয়েকটি কাজ করতে পারি। যেমন : নিজেদের অনাবাদী জমি চাষের উপযোগী করে সেখানে ফসল ও অন্যন্য বীজ রোপন করা। সম্ভব হলে আগে থেকেই শুকনো খাবার, চাল, ডাল, পিয়াজ ইত্যাদি ও বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণ করে রাখা। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সংগ্রহ ও প্রাথমিকভাবে গাছগাছড়ার চিকিৎসা শিখে রাখা। বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতে শাক-সবজি, আলু-মরিচ, পেঁপে-লাউ ইত্যাদির চারা লাগানো। সামর্থ্য অনুযায়ী গরু-ছাগল-মহিষ পালনের ব্যবস্থা করা। বাড়ির পাশে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা। ওয়াসা বা মটরচালিত পানিব্যবস্থার ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে কুয়ো, টিপকল বা নলকূপ বসানো। বিদ্যুতের জন্য সৌরচালিত বিদ্যুৎব্যবস্থা এবং আপতকালিন সময়ের জন্য টর্চ লাইট, ব্যাটারি, কেরোসিন তেল, বাতি, হারিকেন ইত্যাদিও রাখা দরকার। পাশাপাশি চোর ও লুটেরাদের থেকে পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য বাড়ির চারপাশে মজবুত দেয়াল বা প্রাচীর দেওয়া উচিত। নইলে অভাবের তাড়নায় মানুষ সব জায়গায় হামলে পড়তে পারে। তখন যেখানে যা পাবে, তাই নিয়ে যাবে; চুরি করে বা জোর করে হলেও। বর্তমানের ক্যাশ টাকা না ব্যাংকে রাখা নিরাপদ আর না ঘরে রাখা। বিশ্বে সম্ভবত শীঘ্রই ডলারব্যবস্থা বাতিল হতে পারে। আর এটা হলে পুরো বিশ্বে যে কী হবে, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। ডলার ও ক্যাশ টাকার পরিবর্তে সোনা-রোপার গহনা অনেক অনেক বেটার অপশন।
এগুলো তো দুর্ভিক্ষকালীন ভালো থাকার জন্য জাগতিক কিছু হিসাব-কিতাব। কিন্তু এ সময়ে সবেচেয়ে কঠিন হবে, মানুষের ইমান রক্ষা করা। সময়টা হবে খুবই করুণ ও নাজুক। একদিকে জীবনের তাগিদ, আরেকদিকে ইমানের দাবি। খুব কম লোকই তখন নিজেদের ইমান হিফাজত করতে সক্ষম হবে। দুর্ভিক্ষে মারা গেলে তো বেশির চেয়ে বেশি দুনিয়া বরবাদ হবে। কিন্তু ইমান হারালে দুনিয়া-আখিরাত সবই বরবাদ হয়ে যাবে। তাই ইমান বাঁচানোর প্রস্তুতি হিসেবে এখন প্রচুর বই পড়ুন। শেষ জমানার ফিতনা ও ভয়াবহতা নিয়ে বর্তমানে বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। একটু কষ্ট করে, আগ্রহ করে খোঁজ নিন। বইয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বা সাহায্য পেতে ইসলামি বই গ্রুপগুলোতে গিয়ে হেল্প নিতে পারেন। যেভাবেই হোক সংগ্রহ করুন, যেভাবেই হোক জানুন। প্রতি শুক্রবার সুরা কাহাফ পড়ুন। সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ দশ আয়াত মুখস্ত করে রাখুন। সব ধরনের গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হয়ে পুরোপুরি আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন। দুনিয়ার বিলাসিতা পরিত্যাগ করে আখিরাতের ফিকিরে আত্মনিয়োগ করুন। আল্লাহ আমাদের বুঝা ও আমল করার তাওফিক দান করুন।
কার্টেসীঃ তারেকুজ্জাযান তারেক
0 মন্তব্যসমূহ