উত্তম আখলাক কেন প্রয়োজন?
একটা কার গাড়ি যখন বানানো হয় তখন সবার আগে তার বডি প্রস্তুত করা হয়।
এরপর সবার শেষে গাড়িতে রং করার মাধ্যমে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।
কিন্তু গাড়িটা যখন কিছুদিন পড়ে থাকে তখন সবার আগে যে জিনিসটা নষ্ট হয়, সেটা হচ্ছে গাড়ির রং। তারপর গাড়ির অন্যান্য অংশ।
ঠিক এই বিষয়টা নতুন প্র্যাকটিসিং ভাইবোনদের মধ্যেও লক্ষ করা যায়।
কেউ যখন দ্বীনের পথে ফিরে আসে তখন প্রাথমিকভাবে তার মধ্যে 'উত্তম চরিত্র' গুণটা আসে না..প্রথমে সে নামাজ পড়তে শুরু করে, পর্দা করতে শুরু করে, ইসলামের বিধিবিধান মানতে শুরু করে। এভাবে চলতে চলতে একসময় তার মধ্যে উত্তম আখলাকের গুণটা আসে..অর্থাৎ গাড়ির রঙের মতো সবার শেষে উত্তম আখলাকের গুণটা আসে আর এতে দ্বীনদারীর সৌন্দর্য পরিপূর্ণতা লাভ করে...
কিন্তু গাড়ি যখন এক্সিডেন্ট করে তখন যেমন গাড়ির রংটা সবার আগে নষ্ট হয়, ঠিক তেমনি যখন কোনো দ্বীনদার কেউ গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তখন সবার আগে তার উত্তম আখলাকের গুণটাই নষ্ট হয়ে যায়। তার নামাজ রোজা মিস হয় না, সব ঠিকঠাক থাকে, কিন্তু উত্তম চরিত্রের গুনটা দূর্বল হয়ে পড়ে..
তাই বলা যেতে পারে ভালো গুণগুলোর মধ্যে উত্তম আখলাকের গুণটা সবার শেষে আসে, আর ইসলাম পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে এই গুণটাই সবার আগে নষ্ট হয়।
এবার আসুন, হাদিস থেকে বিষয়টা প্রমাণ করি।
~ সহিহ মুসলিমের হাদিস, জাবির রা. থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সত্যিকার ও পরিপূর্ণ মুসলিম সে, যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭]
দেখুন, এই হাদিসে সত্যিকার মুমিন ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখলাকের কথা বলা হয়েছে। সবার সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং নিজের হাত ও মুখ দ্বারা অন্য কাউকে কষ্ট না দেওয়া.. এই গুণটা নিজের মধ্যে আনা যতটা কষ্ট তার থেকে বেশি কষ্ট এটা ধরে রাখা।
আরেক হাদিসে পুণ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উত্তম চরিত্রের কথা বলা হয়েছে।
~ নাওয়াস ইবনু সামআন আল আনসারী রা. থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি জবাব দিলেন, পূণ্য হলো উন্নত চরিত্র। আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং লোকে তা জানুক তা তুমি অপছন্দ করো।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪১০]
তবে যারা এই গুণটা অর্জন করতে পারবে এবং এটা ধরে রাখতে পারবে তাদের জন্য সুসংবাদ হলো, -
কিয়ামতের দিন মানুষের আমলনামায় ওজনে সবচেয়ে ভারি হবে "উত্তম চরিত্র"।
~ আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত:
নবিজি সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মীযানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই হবে না।
[সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং ৪৭৯৯]
সুরা কলমের শুরুতে নবিজির প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন, সেটি হচ্ছে তাঁর অনুপম আখলাক।
নবিযুগে যেসকল মানুষ ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তাদের অধিকাংশই নববী আখলাক ও ইসলামি তাহযীব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
পরিশেষে একটা কথা বলি- "জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম/উপায় হলো উত্তম আখলাক "...
তার কারণ, আপনি যখন সবার সাথে উত্তম ব্যবহার করবেন, বান্দার হক পুরোপুরি আদায় করবেন, আখিরাতে আপনার হিসাব নিকাশ একেবারে সহজ হয়ে যাবে। জান্নাত আপনার প্রতীক্ষায় থাকবে।
কার্টেসীঃ আবুল হাসানাত কাসিম
0 মন্তব্যসমূহ