অন্ধবিশ্বাস বনাম পরিচ্ছন্ন ঈমান

♦অন্ধবিশ্বাস বনাম পরিচ্ছন্ন ঈমান 

মানুষ যা বিশ্বাস করে সেটাই তার কমফোর্ট জোন , আর সেই কমফোর্ট জোনে থাকা যেকোনো স্টেটমেন্টই তাকে আনন্দিত করে । ফলে বিশ্বাসটা যখন অন্ধ বিশ্বাসে রুপ নেয় তখন তা কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারন করে। তখন মানুষ নিজে যেটা বিশ্বাস করে তার বাইরে সকল কিছুই ভুল ভাবা শুরু করে যেটাকে বলে ডগমেটিক মাইন্ড ; যেমন আপনি দুই যোগ দুই সমান চার এমন ভাবে বিশ্বাস করলেন যে আপনাকে কোনো ভাবেই বোঝানো যাবে না যে তিন যোগ একও চার হতে পারে বা পাঁচ বিয়োগ একও চার হওয়া সম্ভব ।
অর্থাৎ অন্ধবিশ্বাসটা আপনার ভাবনার বিস্তারকে একটা বাউন্ডারির মধ্যে আটকে দেয় । জ্ঞান হচ্ছে আলো যা মানুষের বিশ্বাসকে লিড দেয়ার কথা কিন্তু ঐ অন্ধবিশ্বাসের বাউন্ডারি সেই জ্ঞানকে একটা কাস্টমাইজড ফর্মে মানুষের কাছে উপস্থাপন করে ,ফলে তা সেই জ্ঞানের যতটুকু কমফোর্ট জোনে পরে ততটুকু রেখে বাকিটুকু বাদ দিয়ে দেয়ার তাগিদ দেয় । এই ধরনের অবস্থা রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও প্রায় সময়ই বিপত্তি বাধায় ।

আদর্শিক একটা জায়গায় দৃঢ় থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সেই সাথে মনকেও ওপেন রাখাটা জরুরী। ধরুন কেউ যদি বলে সে খ্রিষ্টান না তার আগে তার জানা উচিৎ সে কেনো খ্রিষ্টান না । আবার ধরুন একজন নাস্তিক যখন দাবী করে সে ঈশ্বরে বিশ্বাসী না তার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা । আসলে এটা একটা জার্নি , কিন্তু সব সময় এই জার্নিটা মানুষের ভাল লাগবে না , কারন ঐ যে প্রথমেই বলেছিলাম মানুষ যা বিশ্বাস করে সেটা হচ্ছে তার কমফোর্ট জোন , নিজের চিন্তাকে এই জোনের বাইরে নিতে অস্বস্তি লাগাটাই স্বাভাবিক । তবে কি একটা ঘরের জানালার চারকোনা ফ্রেমে আপনি যে সমুদ্রটা দেখতে পাবেন আদতে তা আসল সমুদ্র থেকে অনেক ভিন্ন হয় । কিন্তু জিনিসটা যদি এমন হয় ধরুন আপনি বাংলাদেশে আছেন এবং একটা সিক্রেট টোকেনে জানতে পারলেন প্রকৃত সুখের ঠিকানা জানতে ভুটানে যাও , ভুটানে গিয়ে জানতে পারলেন প্রকৃত সুখ বাংলাদেশে।তারপর আপনি আবার বাংলাদেশে ফিরে এলেন । সবশেষে আপনার এখনকার বাংলাদেশে থাকা আর আগের থাকার মধ্যে অবশ্যই একটা বিশাল পার্থক্য থাকবে , এটাই স্বাভাবিক ।

ইদানিং আমরা মুসলিমরা খুব বেশি কাঁদা ছোড়াছুড়ি প্রবণ হয়ে উঠেছি , নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে বাতিল ঘোষনা করে , গালাগালি , ঝগড়া ঝাটি এমনকি মারামারি -খুনাখুনী পর্যন্তও গড়াচ্ছে কিছু কিছু ইস্যুকে কেন্দ্র করে । অথচ প্রত্যেক মুসলিম ইন্ডিভিজুয়ালের উদ্দেশ্য কিন্তু একই , মুহাম্মদ(সঃ) এর প্রোপার অনুসরন আর মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করা , জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাওয়া। তার মানে অবশ্যই ভায়োলেট প্রবণ আমরা প্রত্যেকেই সেই ডিভাইন সত্যের খুব নিকট দিয়ে ঘোরাঘুরি করছি আর একে অন্যের সাথে কলহে লিপ্ত হচ্ছি শুধুমাত্র নিজেদের অন্ধবিশ্বাসের দেয়ালে বন্দী হয়ে ।

আপনি পুরো দেশ কিংবা পুরো পৃথিবীটাই ভ্রমন করতে পারেন , কিন্তু এতে সবচেয়ে কঠিন ব্যাপারটা কি জানেন ? সেটা হচ্ছে আপনার ঘর থেকে বেড় হওয়া। ঘর হচ্ছে আপনার একটা আরামের , নিরাপদের , মোট কথা কমফোর্ট জোন ; বিশ্বভ্রমনে বেড় হওয়ার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি ঘর থেকে বেড় হতে প্রস্তুত কি না ! বাকি কাজ গুলো এমনিতেই হয়ে যাবে ।
রসূল(সঃ) এর কাছে ওহী হিসেবে প্রথম আল্লাহ্‌ তায়ালা যে শব্দটি পাঠান সেটি হচ্ছে 'ইকরা' যার শাব্দিক অর্থ পড়ুন হলেও এটা দ্বরা শুধু রিডিং পড়া বোঝায় নি, বরং গভীর চিন্তা ভাবনার একটা আহবান করা হয়েছে ।
মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান মত পার্থক্যের সমাধান হয়তো জানা নাই কিন্তু অ্যাটলিস্ট কাউকে গালি দেয়ার আগে , কারো নামে গীবত করার আগে, বা কাউকে বাতিল, কাফির, মুনাফেক সাব্যস্ত করার আগে একটু ভাবি , চিন্তা করি ... হয়তো আমরা পরস্পরের বিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে মুক্তির খুব কাছাকাছি অবস্থান করছি .........

রাসূল(সঃ) এর শেখানো সেই প্রার্থনা করি "হে আল্লাহ্‌ ! হে অন্তরসমূহের পরিবর্তন আনায়নকারী ! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও" (তিরমিযি ২১৪০)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ